আনন্দবাজার, ২০ জুলাই ২০১৩ । পুস্তক পরিচয়

তাঁর পথে আমরা চলতে পারিনি – শান্তনু চক্রবর্তী

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র, রবীন মজুমদার। চর্চাপদ, ২০০.০০

বিজ্ঞান চর্চার লক্ষ্য, আদল, ঢঙ, প্রকরণ, যান্ত্রিক উপযোগ, সব কিছুই আমরা পশ্চিমি দুনিয়া থেকে ধার করেছি। এ সবের ক্ষেত্রে নতুন দিশা বা সংকেতনির্দেশে আমরা প্রধানত ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার বেদনা শুধু বশ্যতা স্বীকারে ও অনুকরণে বাধ্য থাকার জন্য নয়, এর ভিত্তি আরও গভীরে। ‘প্রকৃতির নিয়ম’-এর বিশ্বজনীনতা মেনে নিলেও, অনুসন্ধানের ক্ষেত্র, ঝোঁক, ধরন, প্রকরণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে বৈচিত্রের সুযোগ থাকে। একই পৃথিবী। কিন্তু মাটি, পাথর, জল, বায়ু, প্রাণী, উদ্ভিদ দেশে-দেশে, প্রদেশে-প্রদেশে, এমনকি জেলায়-জেলায় আলাদা। আমাদের পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রকে জানার, বোঝার চেষ্টায় আমরা কতদূর সফল? বিজ্ঞান গবেষকের সংখ্যায় আমরা বহু দেশের থেকে এগিয়ে। কিন্তু প্রকৃতি, পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র অনুযায়ী শিল্প, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান-গবেষণাকে গড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কতটা উদ্যোগী? উত্তর অজানা নয়।
কিন্তু আমাদের দেশে সে চেষ্টা যে একেবারে হয়নি তা নয়। আর যিনি আজীবন বিজ্ঞানকে স্বদেশমুখী ও দেশোপযোগী করে তোলার চেষ্টা করেছেন, তিনি প্রফুল্লচন্দ্র রায়।
রবীন্দ্রনাথ, জগদীশচন্দ্র, রামেন্দ্রসুন্দর ও হরপ্রসাদের জাতীয়তাবাদের অন্তরে ছিল দেশের ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ, মাটি, জল, বায়ু ও প্রাণজগৎকে তাদের নিজেদের মতো করে জানার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী জ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র সৌধ গড়ার আকাঙ্ক্ষা। এ শুধু পশ্চিম থেকে ধার করা জ্ঞানার্জনের হাতিয়ার ব্যবহার করে দেশকে জানা নয়, এই প্রক্রিয়ায় জিজ্ঞাসা ও জানার উপকরণকে বিষয়োপযোগী, দেশোপযোগী করে তোলা। এই অনুপ্রেরণা প্রফুল্লচন্দ্রেরও। তাই, শুধু রসায়নের গবেষণায় আটকে না থেকে দেশের কিমিয়াবিদ্যার ইতিহাস জানার বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। তাতে এল বিজ্ঞানের বিকাশ ও অধোগতির প্রথম যথার্থ সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা, যা নতুন করে ফিরে আসে কয়েক দশক পরে, ইয়োরোপীয় বিজ্ঞান-ঐতিহাসিকদের রচনায়। দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় দেখিয়েছেন, প্রফুল্লচন্দ্রের রচনাতেই এই জাতীয় ব্যাখ্যার সূত্রপাত। কিন্তু এই অবদান আজও তার প্রাপ্য স্বীকৃতি পায়নি।
প্রফুল্লচন্দ্রের সার্ধশতবর্ষের উদযাপন ঘটা করে হল। কিন্তু এ-সব আলোচনা প্রধানত বাদ থেকে গেল। এই ফাঁক অনেকটাই ভরাট করেছে রবীন মজুমদারের আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র গ্রন্থটি। ভারতীয় প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞানের বৌদ্ধিক ও সামাজিক ভূমিকার চরিত্র অনুধাবনের নিরিখে তিনি প্রফুল্লচন্দ্রের উত্তরাধিকারকে বুঝতে চেয়েছেন। এই তাগিদ থেকে তাঁর পাঁচটি প্রবন্ধ আগেই প্রকাশিত। তার সঙ্গে আরও তিনটি যুক্ত করে তৈরি হয়েছে বইটির আটটি ‘তরঙ্গ’। যেমন, ‘প্রফুল্লচন্দ্র ও পরিবেশ’, ‘সবুজ ও স্থিতিশীল রসায়ন শিল্পের অগ্রদূত’, ‘প্রফুল্লচন্দ্র কি বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন’ এবং ‘প্রফুল্লচন্দ্রের বিজ্ঞানবোধ’। [ ... LINK ]


 

আনন্দবাজার, ৩১ মার্চ ২০১৩ । পুস্তক পরিচয়

antareep

অন্তরীপ ও অন্যান্য (সম্পা: অর্ণব সাহা, ১৭০.০০) – অরূপরতন বসু

চর্চাপদ থেকে বেরিয়েছে অরূপরতন বসুর অন্তরীপ ও অন্যান্য (সম্পা: অর্ণব সাহা, ১৭০.০০)। ‘ভিন্ন অভিমুখ থেকেই গদ্যসাহিত্যের এক সম্পূর্ণ পৃথক ঘরানার দিকে যাত্রা করেন অরূপরতন। হাতে-গোনা কয়েকটি উপন্যাস ও ছোটোগল্প, ছড়ানো-ছেটানো কিছু প্রবন্ধ জাতীয় রচনা ও অন্যান্য রচনায় ছড়িয়ে থাকে সেই অভিযাত্রার চিহ্ন। তেমনই কয়েকটি লেখার সংকলন এই বই।’ সম্পাদকের অভিমত। স্থির পরিণতির দিকে এগোয় এমন আদি-মধ্য-অন্তের গদ্যকে নিত্য ভেঙে ফেলতেন অরূপরতন, তাঁর গদ্যের ভাঙচুর বিষয়ের অন্তর্লীনকে টেনে বের করে আনে, বাস্তবতার গহন থেকে আনে অন্য কোনও মায়া-বাস্তব। যেমন তাঁর ‘প্রথম নৈঃশব্দ্য’: ‘চারিদিকে বই-এর গাদা, ছাপার কালি আর পুরোনো ভিজেকাঠের গন্ধ। ট্রামের শব্দ। বাইরে গ্রীষ্মের মেঘ, জানালা দিয়ে দেখা যায়, দিগন্তের কাছে মোটা কালো একটি পেন্সিলের রেখার মতো সোজা চলে গেছে। ল্যাম্পপোস্টের মাথায় কাক ও চড়ুই খড়কুটো জড়ো করেছে, তার ভিতর আলো ও অন্ধকারের একটি বুনুনি একবার জ্বলে উঠে ফের নিভে যায়।’

কৃষ্ণবর্ণ ষাঁড়ের পিঠে-র (চর্চাপদ, ১৮০.০০) – পীযুষ ভট্টাচার্য

পূর্ণিমার জ্যোৎস্নার অপচ্ছায়া নিয়ে আমাদের পরিবারের মধ্যে তর্কের প্রচলন ছিল। এমন বাক্য দিয়ে শুরু হয় পীযূষ ভট্টাচার্যের ‘জ্যোৎস্নার অপচ্ছায়া’ গল্পটি। সূচনাতেই চেনা যায় তাঁর কলম চালু গদ্যে কথা বলে না। তাঁর সাম্প্রতিক গল্পগ্রন্থ, কৃষ্ণবর্ণ ষাঁড়ের পিঠে-র (চর্চাপদ, ১৮০.০০) পিছনের প্রচ্ছদে জানানো হয়েছে ‘তাঁর গল্পের তল একইরকম ভূমিতে অবস্থিত নয়। ভীষণ এবড়োখেবড়ো, আবার শ্যাওলা পিছল, কোথাও-বা কবিতার মতো।’ নাম-গল্পটির প্রথম বাক্যটিই তো কবিতার মতো: ‘এতদিন ধরে ঘটনাটিকে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে রেখেছিল একই প্রজাতির এক প্রকারের লতানো গাছ যেভাবে কোনো পরিত্যক্ত স্মৃতিসৌধকে ঘিরে রাখে।’

[ ... LINK ]


আনন্দবাজার, ১৬ মার্চ ২০১৩ । পুস্তক পরিচয়

গণেশ পাইন/ ছবিতে কথায়, অঞ্জন সেন। চর্চাপদ, ২৫০.০০

নিরন্তর আত্ম-আবিষ্কারে সচেষ্ট – রবীন মণ্ডল

গণেশ পাইন সম্পর্কে লিখতে বসে অঞ্জন সেনের গণেশ পাইন, ছবিতে কথায় বইটি হাতে এল। বইটিতে নানা প্রসঙ্গে শিল্পী শিল্পচেতনায় মিথ এবং লোককথার মধ্যে তাঁর নানা ভাবনার কথা বলেছেন। এখানে অঞ্জন সেন নানা ভাবে শিল্পী গণেশ পাইনকে বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করেছেন এবং তাঁর শিল্প-মানসিকতাকে গভীর ভাবে অনুধাবন করেছেন। কারণ শিল্পীর সঙ্গে অঞ্জন সেনের খুব অন্তরঙ্গ যোগাযোগ ছিল। ফলে শিল্পীকে জানার পক্ষে বইটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
বইটির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আমি নিজের চিন্তাকে কিছুটা প্রশ্রয় দিয়ে ফেলেছি। গণেশের কাজের মধ্যে যে আত্মজৈবনিকতার স্ফুরণ তা এক দার্শনিক আধারে ধৃত। নান্দনিকতাকে তিনি যে ভাবে ধরেছেন, যে ভাবে গভীর মননশীলতার মধ্যে তাঁর নিজস্ব একটা পরিমণ্ডল গড়ে তুলেছেন তা হয়তো তাঁর বিষাদাচ্ছন্ন মনের প্রকাশ। তাঁর কাজে চিত্রগত রীতি-প্রকরণ খুবই আত্মগত এবং সংযত।
নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দীর্ঘকাল নিজেকে আবিষ্কার করতে তিনি বেশ সচেতন ছিলেন। তাঁর কাজ তাৎক্ষণিকতার ফসল নয়, তা গভীর মনন এবং গবেষণাজাত। বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি নানা ভাবে রেখা এবং বর্ণের মধ্যে একটা সমন্বয় ঘটাতে সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর কাজের মধ্যে যে নীরবতার আবরণ তা আমাদের ভাবিত করে, আপ্লুত করে।
চিত্রগত বিন্যাসের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কিউবিজম এবং আরও কিছু পাশ্চাত্য রীতি-ভাবনা তাঁর মধ্যে কাজ করলেও এ দেশীয় নানা শিল্পরীতি সম্বন্ধেও তিনি যে বেশ সচেতন ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। তাঁর শিল্পশিক্ষার প্রথম দিকে বেঙ্গল স্কুলের যেমন প্রভাব পাওয়া যায় তেমনই বিভিন্ন পর্যায়ে গভীর আত্মসমীক্ষার মধ্যে তিনি নিজেকে আবিষ্কার করতে প্রয়াসী ছিলেন। নিজের কথায় তিনি যে সব বিষয়ে কিছু বলেন বা শিল্পকলা সম্বন্ধে যখন তাঁর ধ্যানধারণার কথা বলেন তখন তাঁর মধ্যে এক গভীর মগ্নতা থাকে। গণেশের কাজের মধ্যে এক বিপন্নতাবোধ কাজ করে, যার রহস্য ভেদ করলে আলোর সরণিতে উত্তরণ ঘটে দর্শকদের।
অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর কাজের মধ্যে এক বৈষ্ণবীয় ভাবনার ইঙ্গিত আছে। বলা যায় তা এত আত্মগত যে মানুষ গণেশের জীবনাচরণের মধ্যে তা অধরা নয়। আমরা সাধারণত জীবনাচরণে বাইরের যে সংকটাপন্নতা দেখি বা বোধ করি, তা প্রকাশ করি আমাদের নিজস্ব বিপন্নতা ঘিরে। ফলে অধিকাংশ শিল্পী যাঁরা প্রায় আমাদের সমকালীন তাঁদের কাজে রাগ, ক্ষোভ, আনন্দ, বেদনা খুব অস্পষ্ট থাকে না যা সরাসরি দর্শকচিত্তে সহজেই ধরা দেয়। এখানে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যে এক ধরনের তাৎক্ষণিকতা কাজ করে যা মনের গভীরে সহজে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু তাঁর সমসময়ে যে সব ঘটনা এবং দেশজ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছিল, তা তাঁর শিল্পচেতনায় এক গভীর আত্মমগ্নতাকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠে। তাঁর এই গভীর বিষণ্ণ বেদনাবোধ দর্শকমনে গভীর ভাবে কাজ করে। তাঁর চিত্রময়তায় উদ্দাম উচ্ছ্বাস অনুভূত হয় না। গণেশ সমকালকে নিজস্ব বোধ দিয়ে আবিষ্কারে সচেষ্ট ছিলেন।
এক পরিশীলিত মনের অধিকারী ছিলেন গণেশ যা তাঁকে বাইরের দিক থেকে কোনও উচ্ছ্বাসে নিমগ্ন হতে দিত না। তাঁর মননে আদিমতা এবং লৌকিক পরিমণ্ডলের ছাপ অস্পষ্ট নয়। তাঁর কাজে যে আলো-আঁধারের খেলা চলে তা বর্ণাশ্রিত হলেও রেখার গতিপ্রকৃতিকে তিনি এমন ভাবে বিন্যস্ত করেছেন যা আমাদের আকর্ষণ করে। তাঁর মননের দীপ্তিময়তা বিষণ্ণতাকে ছাপিয়ে অন্য এক মগ্নতায় আক্রান্ত করে, আমাদের উজ্জীবিত করে সৃষ্টির আলোকে।
গণেশের শিল্পমানসে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের ভাবনাচিন্তার উপস্থিতি অপ্রত্যক্ষ নয় যা জানা প্রয়োজন এ কারণে যে তাঁর মানসগঠনে যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, যেখানে শুধু যে কিছু ভারতীয় তথা বিদেশি ধ্যানধারণা তাঁর শিল্পলোককে প্রভাবিত করেছে এমন নয়, বেশ কিছু লৌকিক এবং উপকথার আত্মিক সম্পর্ক স্পষ্ট বোঝা যায়। তাঁর কাজের মধ্যে যে ছায়াপাতই ঘটুক না কেন, আসলে নিজস্ব নিঃসঙ্গ এক দার্শনিকের ভাবনায় উদ্ভাসিত তাঁর শিল্পসম্ভার।
অনেকের কাছে শুনেছি তাঁর আদি বাড়ির পরিবেশের মধ্যে যে প্রাচীনতা, স্তব্ধতা, আধা-আচ্ছন্নতা এবং পারিবারিক জীবনচেতনা তা সামগ্রিক ভাবে বাল্যকাল থেকেই তাঁর মানসিকতাকে অন্য এক ভাবনায় গড়ে তুলেছিল। অন্ধকারের মধ্যেই আলোর সন্ধান করতে হয়েছে তাঁকে। এই সন্ধান-রহস্যের মধ্যে অন্য এক দার্শনিকতা দেখতে পাই।
একটা সময়ে ওঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে আমার বেশ যোগাযোগ ছিল। দেখেছি ব্যক্তিমানুষ গণেশ কখনওই সরব ছিলেন না, মৃদুভাষী, তৎসত্ত্বেও বক্তব্যে সরাসরি নিজের জানা কথা স্পষ্ট ভাবে বলতে অভ্যস্ত ছিলেন।
যে ভাবেই দেখি না কেন, তাঁর শিল্পকলার গঠনে, মননে যে পারিপাট্য তা সময়ের নিরিখে কথা বলে। শুধু দৈর্ঘ্যপ্রস্থের স্বল্পপরিসরে তাঁর বিষয়ভাবনাকে আবদ্ধ রাখেননি। সময়কে তিনি বিশেষ মান্যতা দিয়ে, বোধ দিয়ে বিচারবিশ্লেষণ করেছেন। বর্ণলেপন এবং রেখার মায়াজালের খেলায় তিনি নিরন্তর নিজেকে আবিষ্কারে সচেতন, সচেষ্ট ছিলেন। [ ... LINK ]


আনন্দবাজার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ । পুস্তক পরিচয়

বাঁকাউল্লার দপ্তর সটীক সংস্করণ, সম্পা. প্রসেনজিত্ দাশগুপ্ত, সৌম্যেন পাল, চর্চাপদ, ১৮০.০০

বাংলার প্রাচীনতম ক্রাইম-কাহিনি সম্ভবত দারোগা বাঁকাউল্লার কীর্তিকলাপ। ১৯০৫-এর পর সুকুমার সেনের সম্পাদনায় ১৯৮৩-তে প্রকাশিত হয় বাঁকাউল্লারদপ্তর। সে পাঠই আদ্যন্ত মান্য করে প্রকাশিত হয়েছে বাঁকাউল্লার দপ্তর সটীক সংস্করণ (সম্পা. প্রসেনজিত্ দাশগুপ্ত, সৌম্যেন পাল, চর্চাপদ, ১৮০.০০) [ ... LINK ]


আনন্দবাজার, ২১ জানুয়ারি ২০১৩ । কলকাতার কড়চা

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর দার্জিলিং, প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত ও সৌম্যেন পাল সম্পাদিত সটীক সচিত্র সংস্করণ

darjeeling

সার্ধশতবর্ষে এখনও বিস্মৃত উপেন্দ্রকিশোর

বলেন কী মশাই? এই জানুয়ারীর শীতে দার্জিলিং? এখন তো বেলা বারোটায় বরফ পড়বে সেখানে! দার্জিলিঙের সীজন সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর।” বছর ষাটেক আগে বাঙালির দার্জিলিংকে শীতে উপেক্ষিতা করে সাড়া জাগিয়েছিলেন নিরঞ্জন মজুমদার ওরফে রঞ্জন। তাঁর দার্জিলিং-যাত্রায় সহযাত্রী ওই প্রশ্নটি করেছিলেন। কিন্তু সিজন হোক চাই না হোক, দার্জিলিং বাঙালির ভ্রমণে দেড়শো বছরেরও বেশি জড়িয়ে আছে। আর সেই জড়িয়ে থাকার বহু নিদর্শন আজও ছড়িয়ে আছে পত্রিকার পাতায়। সখা, সাথী, সন্দেশ ও মুকুল পত্রিকায় নিজের দার্জিলিং ভ্রমণের বিবরণ লিখেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। তাঁর জন্মের এই সার্ধশতবর্ষেও টুনটুনির বই, গুপী গাইন বাঘা বাইন-এর বাইরের সে সন্দেশ ক’জন জানেন সন্দেহ। এ কলকাতা জানে গড়পার রোডের ইউ রায় অ্যান্ড সন্স বাংলা ছাপার জগতে কী আলো এনেছিল। তবে সে আজ শুধু এলিট চর্চার বিষয়। কোনও যথার্থ উপেন্দ্রকিশোর সমগ্র, যার মধ্যে থাকবে তাঁর সমস্ত লেখা, আঁকা সব ছবি, তোলা সব আলোকচিত্র তাঁর মৃত্যুর শতবর্ষ ছুঁতে চললেও এখনও অধরা।

কিঞ্চিৎ আশার আলো, বইমেলায় ‘চর্চাপদ’ থেকে প্রকাশিত হচ্ছে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর দার্জিলিং, প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত ও সৌম্যেন পাল সম্পাদিত সটীক সচিত্র সংস্করণে। সযত্ন-প্রকাশনায় দার্জিলিং ও তিব্বত নিয়ে উপেন্দ্রকিশোরের লেখাগুলি তাঁর তোলা ও আঁকা ছবি-সমেত সংকলিত। টীকায় প্রায় প্রতিটি প্রসঙ্গের বিবরণ আছে। পাহাড়, মেঘ, ঝর্না, সূর্যের আলো মিলিয়ে নামলিপি এঁকেছেন সৌজন্য চক্রবর্তী। কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যোদয়ের মতো সেই গদ্যে দার্জিলিং আরও এক বার চোখের সামনে: ‘পর্বতের কোলে মেঘের নিদ্রা দেখিতে বড়ই সুন্দর। চঞ্চল মেঘ সমস্ত দিন ধরিয়া ছুটাছুটি করে। তাই কি সন্ধ্যাকালে তাহার ঘুম পায়? ওই দ্যাখো, তাহারা কেমন শান্ত হইয়া পর্ব্বতের গায়ে শুইয়া পড়িয়াছে। সমস্ত রাত্রি তাহারা ওইরূপ ভাবে কাটায়। সকালবেলা সূর্যের আলো তাহাদের গায়ে পড়িবামাত্র তাহাদের ঘুম ভাঙিয়া যায়।’ ১০ মে ১৮৬৩ উপেন্দ্রকিশোরের জন্ম। বিবিধ বর্ষ পালনের হুজুগে বাঙালির ঘুম কিন্তু এখনও ভাঙল না।


আনন্দবাজার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ । পুস্তক পরিচয়

মাধবীকানন (সম্পা: সুপর্ণা ভট্টাচার্য। চর্চাপদ, ৩৫০.০০)

madhabi

‘সততা থাকলে, প্রতিভা থাকলে, অভিনয় ক্ষমতা থাকলে, গলিতে প্রবেশের কোনও প্রয়োজনই হয় না। মাথা উঁচু করে রাজপথ দিয়ে হাঁটা যায় এবং সফল হওয়া যায়। যেমন হয়েছেন, কানন দেবী। যেমন হয়েছি, আমি।’— মাধবী মুখোপাধ্যায়ের আশ্চর্য আত্মকথন মাধবীকানন (সম্পা: সুপর্ণা ভট্টাচার্য। চর্চাপদ, ৩৫০.০০)। তাঁর অভিনয়-জীবনে সান্নিধ্যে আসা মানুষজনেরও উন্মোচন। শুরুতে মৃণাল সেন ‘মাধবীর জন্য দু-চার কথা’য় তাঁর ‘বাইশে শ্রাবণ’ ছবিতে মাধবীর অভিনয়ের সূত্রে লিখেছেন ‘‘ঋত্বিক এবং তার পরেই সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে মাধবী দুর্দান্ত অভিনয় করল। আমার প্রযোজক যেমন নাম রেখেছিল মাধবী, বিদেশে কেউ কেউ নামকরণ করেন ‘চারুলতা’।”