আনন্দবাজার , ২১ মে, ২০১৬ | পুস্তক পরিচয়
বাবু-বাঙালির আত্মানুসন্ধান – শুভরঞ্জন দাশগুপ্ত
কাটা জিভের বৃত্তান্ত/ চন্দনা ডাইনি আর জাদুবাতি, রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়। চর্চাপদ, ৫০০.০০
লেখকের কাছে আমি মনে মনে একটি প্রশ্ন পেশ করেছিলাম। প্রশ্নটি হল: ‘‘আপনার এই অসামান্য রচনাটিকে আপনি সাহিত্যের কোন সুনির্দিষ্ট বিভাগে বা বৃত্তে স্থান দেবেন— চিরাচরিত প্রচলিত উপন্যাস, প্রথা-ভাঙা উপাখ্যান, কোরিক আখ্যান, স্মৃতি-বিস্মৃতির রোমন্থন, নৃতত্ত্ব-নির্ভর সৃজন না দীর্ঘায়িত গদ্যকবিতা? বলাই বাহুল্য, আমি কোনও উত্তর পাইনি। কিন্তু উত্তর মেলেনি বলেই আমি লেখকের সঙ্গে চটকদারি লেবেল পোস্টমডার্ন বা উত্তর-আধুনিক জুড়তে প্রস্তুত নই।
এক আয়তনিক সময়ের পরম্পরাকে অগ্রাহ্য করলেই এবং সৃজনে ম্যাজিক রিয়ালিজম বা মায়াবাস্তবের প্রবেশ ঘটালেই কেউ উত্তর-আধুনিক হয়ে ওঠেন না। সত্যি যদি লেবেল লটকানো এত সহজই হত, তা হলে সবচেয়ে আগে আমরা মার্কেজ আর গুন্টার গ্রাসকে উত্তর-আধুনিক বলতাম। কেন তাঁরা উত্তর-আধুনিক নন তা গুন্টার গ্রাসই চাঁছাছোলা ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন: ‘‘শুধুমাত্র গদ্যশৈলী ও নির্মাণশৈলীতে নবত্ব থাকলেই লেখক উত্তর-আধুনিক হয় না। উত্তর-আধুনিক হওয়া মানেই একটি বিশেষ বিশ্বদৃষ্টির সমর্থক হয়ে যাওয়া, যার সঙ্গে সাম্যবাদের যোগ অত্যল্প। আমি মনেপ্রাণে সাম্যবাদী, তাই আমি উত্তর-আধুনিক নই।’’
যাঁরাই রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃজনের সঙ্গে অল্পবিস্তর পরিচিত, শৈশব থেকে বাংলার মুখ, তারপর সত্তরের জার্নাল থেকে আলোচ্য বই, তাঁরাই সন্দেহাতীত ভাবে জানেন যে, লেখক মার্কসীয় বীক্ষার অনুসারী, তিনি মার্কসবাদী, অতএব তাঁকে মার্কসবাদ-বিরোধী উত্তর-আধুনিকতার সঙ্গে যুক্ত করা ভ্রান্ত সমীকরণ। কখনও সচকিত স্বরে, কখনও আভাসে-ইঙ্গিতে তাঁর এই হৃদয়ী আনুগত্য প্রকাশ পেয়েছে— একটি অন্তঃসলিল ধারার মতো মার্কসীয় বিশ্বাস বয়ে চলেছে তাঁর লেখাগুলিতে।
এমনকী, আলোচ্য বইটি যে চিঠির অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে শেষ হয়েছে, সেখানেও এই বিশ্বাস প্রতিভাত। পত্রলেখক সাম্যবাদের প্রভাবেই একটি গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন: ‘‘কিন্তু কাঙাল যারা, যাহারা দীনদরিদ্র, যাহারা জাতের চাপে পিষ্ট তাহাদের কথা, তাহাদের মুক্তির কথা বিশেষ শুনিতে পাই না কেন?’’ (পৃ: ৩৭৩) সুস্পষ্ট এই প্রশ্ন এবং এই প্রশ্নের মাধ্যমেই রচনাটির সমাপ্তি প্রমাণ করে যে, লেখক উত্তর-আধুনিকতার প্রতিনিধি একেবারেই নন। প্রতিনিধি হবেনই বা কোন দুঃখে?
শুরুতে উত্থাপিত প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে আমিও কিছুটা বিপাকে পড়ি। মারিও ভার্গাস হোসা ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাঘব এঁদের প্রভাব আত্মস্থ করেই এই উপাখ্যানে এক চমকপ্রদ নির্মাণশৈলী গড়ে তুলেছেন, যেখানে কালপরম্পরাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখানো হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি এমন এক গদ্যশৈলী উপহার দিয়েছেন, যা সহজ-স্বাভাবিক বিন্যাসে যুক্তিময় মননশীল ভাষা আর আদ্যন্ত লিরিকধর্মী ভাষাকে একই সঙ্গে ধারণ করতে সক্ষম। মননশীল যুক্তিতর্কের ভাষাটিতেও কবিতার স্পন্দন প্রায়শ শোনা যায়। তাই আমি বলব যে, দীর্ঘায়িত গদ্যকবিতার বৃত্তেই রচনাটির স্থান নির্ধারিত।
প্রথমেই চোখে পড়ে অনবদ্য কিছু তুলনা বা উপমা, যেমন পৃষ্ঠা ১৭-তে, ‘‘গলির গলি, তস্য গলিতে তুলোর আঁশের মতো নীরবতা ছিল।’’ পৃষ্ঠা ২৪-এ আমরা পাঠ করি ‘‘দুর্ভিক্ষের বাটি হাতে বিয়াল্লিশের বাংলার অর্ধনগ্ন হাড় জিরজিরে মা, তার হাড়ে লেপটে থাকা মিউরালের মতো শিশুটির দু’চোখ অনেক দিনের জলের শুকনো, ক্ষতের মতো দাগ…’’ এ হেন উপমা স্তম্ভিত করে এবং স্মৃতিতে বয়ে আনে জীবনানন্দর উপমার সৃষ্টি।
এই মুহূর্তের বিচ্ছুরণই দীর্ঘ হয় সেই অংশগুলিতে, যেখানে ম্যাজিক রিয়ালিজম বা মায়াবাস্তব প্রবেশ করে স্বাভাবিক ছন্দে। কল্পনা আর বাস্তব এই পর্বগুলিতে একত্র হয়ে গড়ে তোলে এক অনন্য সৃজনশৈলী। যেমন পৃষ্ঠা ৪৩-এ, ‘‘বেহালাবাদক ঠাকুরদা মাদ্রিদ-বার্সিলোনা এবং আর আর শহরে মাত করার সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরী, অভিজাত মহিলারা, তাদের যুবতী মেয়েরা ‘রোগোবার্তো রোগোবার্তো’ ধ্বনিতে এমন ঝড় তুলত, তাকে একবার স্পর্শ করার জন্য তাদের আঙুলগুলি ছুটতে শুরু করত, তাদের ঠোঁট গুচ্ছ গুচ্ছ প্রজাপতি হয়ে এমন শিসধ্বনিতে উ়ড়ে আসত, যে শেষ পর্যন্ত বেহালার যাদুকরের মুখটি হয়ে উঠত প্রজাপতির অর্ধবৃত্তাকার এক বিমূর্ত চিত্রশালা।’’
লিরিকধর্মী গদ্য তার চূড়ান্ত রূপ পরিগ্রহ করে এক-একটি নির্দিষ্ট পরিচ্ছেদে, যেখানে কবিতার স্তবক আর গদ্যের অনুচ্ছেদ পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে মিলে গিয়ে নির্মাণ করে এক স্বতন্ত্র ভাষাশৈলী, যেখানে গদ্য ও কবিতার ভিতর আর কোনও সীমারেখাই থাকে না। এই শ্রেণির একটি পরিচ্ছেদ ‘কুটীল কুন্তলে কিবা বান্ধিয়াছে বেণী।’
ঠিক এই প্রসঙ্গে অন্য দু’টি উপন্যাসের কথাও অনিবার্য ভাবে স্মরণে আসে। এক, আখতারুজ্জামানের খোয়াবনামা আর দুই গুন্টার গ্রাসের দ্য ফ্লাউন্ডার, এই দুটি উপন্যাসেও মায়াবাস্তবের চাপে গদ্য উন্নীত হয় কবিতার স্তরে আর গদ্যকবিতা করধৃত করে কাব্যময়তাকে। সর্বোপরি, এই তিনটি উপন্যাসেই অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ তাদের পৃথক পৃথক প্রাচীরগুলিকে ভেঙে সৃষ্টি করে এক নতুন সময়চেতনা। সমালোচক গেয়র্গ স্টাইনার এই বিশিষ্ট ভাষা ও ভাষার গঠনকেই ‘লিরিকাল ফিলসফি’ বলেছেন, আর এর সর্বোৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত তিনি দেখেছেন মার্টিন হাইডেগারের গদ্যে, যেখানে অনুপ্রাণিত দার্শনিক হ্যোল্ডারলিন-এর কবিতা বিশ্লেষণ করেছেন তন্ময় ভাষায়।
এই মহাকাব্যিক উপাখ্যানের বিষয়বস্তু কী? নানান চরিত্র ও নানান ঘটনার সমাবেশ রচনা করে লেখক আমাদের ঠিক কী উপহার দিতে চেয়েছেন? সহজ ভাষায় বললে, তিনি ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর বাবু-বাঙালির আত্মানুসন্ধান ও আত্মচরিত্র লিপিবদ্ধ করেছেন মরমী কিন্তু নৈর্ব্যক্তিক ভাষায়। কখনও এই বাঙালি আপসকামী, বিদেশি শাসকের কাছে যাওয়ার জন্য আকুল, আবার কখনও সে তেজোদীপ্ত বিদ্রোহী। সংশ্লিষ্ট গল্পগুলিকে সূত্রবদ্ধ করেছেন একটি কোরিক দম্পতি— বাঙালি স্বাধীন ও তার স্পেনীয় দয়িতা রোজারিও।
অতীতমুখী রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায় সুদূরের নিমাই সন্ন্যাসীকেও আমাদের কাছে এনেছেন এবং তারপর এসেছে একের পর এক— মিউটিনি, বাংলার নবযুগ, স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালির ভূমিকা, দেশভাগ ও স্বাধীনতা এবং নকশালবাড়ির বৃত্তান্ত। ঘটনা ও স্মৃতির এই সুদীর্ঘ যাত্রার অন্তঃসার ব্যক্ত করতে গিয়ে লেখক নিজেই বলেছেন ‘‘খণ্ড খণ্ড অজস্র গল্প, গল্পের টুকরো পরস্পর জুড়ে রচনা করে এক অন্তহীন কথকতা যা অন্তর্লীনও বটে।’’
এই ক্রমবর্ধমান, নিবিড় আখ্যানের পরিপূর্ণ স্বাদ আমরা পাই একাধিক পরিচ্ছেদে, যেগুলির ভিতর বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য হল ‘বিবিজান চলে যান লবেজান করে’ (পৃ: ২২৪-২৪৩) এবং ‘কান্নাকাটির কনসার্ট’ (পৃ: ৩৪২-৩৫৮)। পৃষ্ঠা ৩৪৫-এ তিনি বাবু-বাঙালির জাতীয় চরিত্র বর্ণনা করেছেন এই ভাষায়— ‘‘আমোদ গেড়ে জাত: আত্মঘাতী জাতি/ কাঁকড়াবৃত্তিতে নিবেদিত: পরশ্রীকাতর জাত/ উনিশ শতকের বাঙালি: (গুটিকয়) ব্যতিক্রম/ মুসলমান, গরিবগুর্বো চাষামজুর বাদ: বাঙালি মানে স্রেফ ভদ্রলোক বাবু-বাঙালিই বাঙালি/ অলস কর্মবিমুখ হিংসুটে নিন্দুক ফিচেল।’’ স্মৃতি-বিস্মৃতির প্রবেশ ঘটেছে বিভিন্ন স্থানে। ভারতচন্দ্রের কাব্য থেকে কবি কিংকরের বর্ণনা তাদের স্থান করে নিয়েছে অনায়াসে।
এই স্মৃতিভিত্তিক ইতিহাসে সব থেকে মরমী পরিচ্ছেদ হল ‘সেই ক্ষত ১৯৪৭’। প্রফুল্ল চক্রবর্তী, হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারের দেশভাগ সম্পর্কিত লেখালেখির পরও এই রচনাটি গুরুত্ব অনস্বীকার্য, কারণ এখানে সুতীব্র মননশীল গদ্য বিরাট ট্র্যাজেডিকে মূর্ত করেছে সহজ-গভীর ভাষায়। যেমন, ১৫৯ পৃষ্ঠায় রাঘব লিখেছেন, ‘‘দেশভাগ, দাঙ্গা বাঙালির জীবনে মস্ত বড়ো ক্ষত— মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত, উদ্বাস্তু, নমশূদ্র, চাঁড়াল সব্বাইকে রাতারাতি, স্রেফ বেঁচে থাকার জন্য বহু সংস্কার, সংকোচ মরা খোলসের মতো ত্যাগ করতে হয়েছে… নমশূদ্ররা মাটির পোকা, তারা যেন গাছগাছালি, যেখানে জন্মাবে, যেখানে পুঁতবে সেইখানেই তারা খুঁটিতে বাঁধা গোরু-ছাগল হয়ে থাকবে, সেইখানেই শেষ নিশ্বাস ফেলবে।’’ এই গদ্যশৈলী চাবুকের আঘাতের মতো এবং এক মুহূর্তে এই গদ্য আমাদের নিয়ে যায় আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের কাছে, যিনি দেশভাগকে বাঙালির জীবনে সর্বাধিক অর্থহীন ট্র্যাজেডি বলে রায় দিয়েছিলেন।
ইলিয়াস ও রাঘব তুলনীয় তীব্র ও কাব্যিক ভাষায় এই বিরাট অভিশাপকে বর্ণনা করেছেন। বইটির ১৭৮ পৃষ্ঠায় বিক্ষত লিরিকের মাধ্যমেই এই অভিশাপ জীবন্ত হয়ে উঠেছে: ‘‘কুপার্স ক্যাম্পে অনেকের চোখের সামনে সংগম করা, আমাশয়-কলেরায় শিশুমৃত্যু, কঠোর শ্রম, এক পেট খিদের বাইরেও আনমনা, শিথিল, শান্ত, নদীর বাতাসে জেগে ওঠা রোঁয়া— যা জৈবিকই, এবং এ কোনও অতীতের জন্য হাহাকার নয়, এ এমন এক অনুভব, অভিজ্ঞতা যা হয়তো পুষ্পস্তবকের মতো, তথ্যের ভাণ্ডারের মতো কারও হাতে তুলে দেওয়া যায় না; সে থাকে চাউনিতে, শ্বাসে, মুদ্রায় ও মুদ্রাদোষে।’’ এই নাড়ি-মোচড়ানো বিবরণীর পর আর কী-ই বা লেখা যেতে পারে।
বিনীত লেখক প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন যে, তিনি এক দিকে কমলকুমার মজুমদার, সতীনাথ ভাদুড়ি ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর কাছে ঋণী; অন্য দিকে লাতিন আমেরিকার একাধিক ঔপন্যাসিক তাঁকে আলোড়িত করেছেন। সত্য হল, এই দ্বিমুখী প্রভাব আত্মস্থ করার পরও তিনি অনুকরণ থেকে অনেক দূরে থেকেছেন। তিনি রয়ে গিয়েছেন স্বতন্ত্র ও স্বরাট। এবং এই অন্তর্নিহিত নিজস্বতাই তাঁর আলোচ্য উপাখ্যানকে দান করেছে স্বাধীন গরিমা। [ ... LINK ]
এই সময়, ১৩ এপ্রিল, ২০১৬
The Telegrpah, Sunday , October 26 , 2014
Shahzadi, Shaikh Chilli and a sea of stories
Once upon a time, a king who had seven sons asked the princes to choose their brides by shooting arrows; they would have to marry a girl from the house on which an arrow fell. All the princes got beautiful brides, except the youngest, who accidentally chose a monkey. But he refused to let her go, and loved her, and took care of her, as one would of a beloved pet, calling her “Shahzadi”, and married no one.
When the king wanted to meet all the princes at their palaces, the youngest despaired. But his monkey asked him to go ahead. And lo and behold, the palace was transformed into a place of magical beauty, a feast befitting the gods waited for the king. When it was time for the king to meet the monkey, in her place appeared a beautiful Peri, who had taken the form of a monkey to test the prince’s love. Thence began another trial. The prince burnt the monkey skin that his beloved had cast away to keep her with him forever and she disappeared, crying: “I burn, I burn, I am roasted, I am roasted.”
This story, which seems to have landed straight from the Arabian Nights, and is also a version of a Russian fairy tale in which Princess Vasilisa, the Wise and Clever, is disguised as a frog and marries Ivan, the Tsar’s youngest son, appears as part of Folk Tales of Hindustan attributed to Shaikh Chilli. First serialised in 1907 in Modern Review, a journal edited by Ramananda Chatterjee, then as a book in 1908 and later in 1913 with illustrations by U. Ray & Sons, these stories, collected and rewritten by Shrish Chandra Basu in English for Modern Review, now appear in a new edition published by Charchapada, Calcutta.
It is not known who Shaikh Chilli was. He is like Mullah Naseeruddin, Gopal Bhand and Birbal; a folk figure, the owner of a witty, lively and sometimes sharply ironic voice who may have existed, may not have; who may have been a Sufi saint and a teacher to the Mughal prince Dara Shikoh, or may not have. But the stories do.
They not only show yet again how stories travel, connecting many parts of the world and many centuries, but the existence of a culturally composite India, at least in imagination.
Shaikh Chilli’s tales combine the backdrop and plots of the Arabian Nights with the social and moral atmosphere of Panchatantra, the Jatakas or Vetal Panchavimshati. In The Story of Raja Vikram and the Evil Yogi, Raja Vikramaditya travels to China, in disguise, intending to win over the wise daughter of the king, and sings to her, first raga Dipak, and on another occasion, ragini Bhairavi. If only Indo-China diplomacy was so easy now. In The Story of Prince Mahbub, the eponymous prince rescues his father’s severed head from an underwater world, where, as it drips blood that turns into rubies, it is guarded by 12 most beautiful Peris.
In The Story of the Seven Goldsmiths, a goat rakshasi has her brother, a nobleman-rakshas, bringing her a man every night, and as he sleeps, she sucks his blood. “Sister, art thou happy?” the nobleman asks. “Brother Rakshas, I am happy so long as you keep me so, my hunger is satisfied so long as you give me human blood.” Very vampire-like, but then Richard R. Burton had translated Vetal Panchavimshati as Vikram and the Vampire in 1870. A baital is a “vampire or evil spirit that animates dead bodies”.
Basu’s translation of Shaikh Chilli’s stories is vibrant, robust and accommodating and very entertaining: Urdu, Hindi and Sanskrit words flow into the English syntax naturally. Even if they don’t, his narration somehow retains the flavour of the Indian setting.
His work, of course, needs to be seen in the tradition of the great fairy-tale compilation project, both in English and vernaculars, which was going on in India, encouraged, among other things, by the Grimm Brothers’ compilation. As the afterword in the new edition says: “The first edition of Folk Tales of Hindustan was published in 1908, a year after the appearance of Dakshinaranjan Mitra Majumder’s Thakurmar Jhuli…” The book’s antecedents can be traced to older anthologies of Indian folk tales such as Mary Frere’s Old Deccan Days (1868), Lal Behari Dey’s Folk Tales of Bengal (1883) and Richard C. Temple’s Legends of the Punjab (1883-85).
The Charchapada edition comes with new colourful pictures by Anup Roy, but an additional treat is a selection from the original illustrations by Upendrakishore Ray Chowdhury, appearing at the end.
Shaikh Chilli, as told by Basu, is a must read. For the young and the old. [ ... LINK ]
এই সময়, ২১ জুন, ২০১৪
আনন্দবাজার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ । পুস্তক পরিচয়
Folk Tales of HIndustan, Rs. 880
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকায় (১৯০৭) ফোক টেল্স অব হিন্দুস্তান প্রথমে ধারাবাহিক প্রকাশিত হয়েছিল, বই-আকারে প্রথম সংস্করণ পরের বছর। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ঠাকুরমার ঝুলি/ বাঙ্গালার রূপকথা-ও বেরিয়েছিল ১৯০৭-এ। ইউরোপীয়দের উৎসাহে এ দেশের লোককথা সংগ্রহ অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল উনিশ শতকেই, রেভারেন্ড লালবিহারী দে তাঁর ফোক টেল্স অব বেঙ্গল (১৮৮৩)-এর ভূমিকায় তাঁর সংগ্রহের জন্য রিচার্ড কারনাক টেম্পল-এর অনুপ্রেরণার কথা স্পষ্ট করেই বলেছেন। ফোক টেল্স অব হিন্দুস্তান-এর ভূমিকায় রামানন্দ দুঃখ করেছিলেন, বিদেশে লোককথা নিয়ে চর্চা রীতিমতো প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলেও ভারতে লোককথা সংগ্রহের কাজটি বিদেশিদের জন্যই রেখে দেওয়া হয়েছে, ভারতীয়রা তাকে কোনও গুরুত্বই দেয়নি। বিশ শতকে অবশ্য লোককথা সংগ্রহের বিষয়টি আস্তে আস্তে যথেষ্ট গুরুত্ব পেতে থাকে এবং জাতীয়তাবাদী আখ্যানে তার ভূমিকাও তৈরি হয়। এক দিকে লোককাহিনি ‘অবিকৃত’ ভাবে, কোনও রকম সংশোধন ছাড়া লিপিবদ্ধ করার উপর জোর দেওয়া এবং অন্য দিকে ছোটরা পড়বে বলে ‘সামান্য’ পরিবর্তন করা এই দুটি বিষয়ের উল্লেখই রামানন্দের ভূমিকায় নজর কাড়ে, যা পরে ভারতীয় লোককথা সংগ্রহের বিচিত্র ইতিবৃত্তে বহু আলোচিত। আর একটি লক্ষণীয় দিক, গল্পগুলি সুফি সন্ত শেখ চিল্লি-র নামে প্রকাশিত, যদিও আদতে শ্রীশচন্দ্র বসু এগুলি সংকলন করেন। সংকলনটি উৎসর্গ করা হয়েছিল যুক্তপ্রদেশের লেফটেনান্ট-গভর্নর জে এস মেস্টনকে, সেখানে উল্লেখ ছিল লোককথাগুলি সেই অঞ্চলে প্রচলিত। সমসাময়িক আলোচনা থেকেও বুঝতে অসুবিধা হয় না, উত্তর ভারতে বহুপ্রচলিত নানা ফার্সি-উর্দু কিসসা-কাহিনিই এর উৎস।
ফোক টেল্স অব হিন্দুস্তান ১৯১২-য় বাংলায় অনুবাদ করেন রামানন্দ-কন্যা সীতা দেবী ও শান্তা দেবী (হিন্দুস্থানি উপকথা)। সঙ্গে ছিল উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অনবদ্য চিত্রণ। ১৯১৩-য় ইলাহাবাদের পাণিনি অফিস থেকে প্রকাশিত হল মূল ইংরেজি বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ। উপেন্দ্রকিশোরের ছবিগুলি এতেও সংযোজিত হয়। চর্চাপদ থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত হল বইটির নতুন শোভন সংস্করণ (ফোক টেল্স অব হিন্দুস্তান, শেখ চিল্লি। ৮৮০.০০), সেখানে গল্পগুলির সঙ্গে নতুন করে অনেক রঙিন ছবি এঁকেছেন অনুপ রায়। শেষে রয়েছে মূল দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা, এবং এই বইয়ের প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা। উপেন্দ্রকিশোরের আঁকা ৩৫টি ছবির মধ্যে এখানে ছাপা হয়েছে ২৮টি সাদাকালো ছবি। [ ... LINK ]
আনন্দবাজার, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ । পুস্তক পরিচয়
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলার ব্রত বইয়ে আলপনা প্রথম গ্রন্থবদ্ধ হয়। তরুণ শিল্পী রবি বিশ্বাস লক্ষ্মীপুজোর আলপনা নিয়ে ক্ষেত্রানুসন্ধানে নথিবদ্ধ করেছেন বিপুল তথ্য-চিত্র। তাঁর লক্ষ্মীর পা (চর্চাপদ, ৫০০.০০) বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির চর্চায় নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। [ ... LINK ]
আনন্দবাজার, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ । পুস্তক পরিচয়
রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আখ্যান কমুনিস আর স্মৃতিলেখ জার্নাল সত্তর একত্রে প্রকাশ করল চর্চাপদ— ১৯৭০ (৩৭৫.০০)। তাঁর আর এক অসামান্য আখ্যান শৈশব-এরও (১৯৮০) চর্চাপদ সংস্করণ (১৫০.০০) বেরল, বহুচর্চিত চালু জনপ্রিয় কাহিনিপাঠের বিপরীত বাঁকে পাঠককে দাঁড় করিয়ে দেয় রাঘবের এ-উপন্যাস [ ... LINK ]