রাঘবসাহিত্য: এক অর্বাচীন পাঠকের জার্নাল : সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
গল্পে শুনেছি, নচিকেতাকে যখন ‘ধন-রতন’ অফার করলেন যম, নচিকেতা চাইলেন ‘জ্ঞান’! অন্যদিকে ছোটো থেকে বড়ো হতে গিয়ে, ‘ছেলে-ভোলানো’ ছড়ায় শুনলাম, লেখাপড়া (যা-কিনা আমাদের সময়ে অন্তত ‘জ্ঞান’-এর প্রাথমিক উৎস) করে যে, গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ে ওঠা (ভাড়ার ভেবে বসবেন না যেন), তার পক্ষেই সম্ভব হয় কেবল! তাহলে তো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে নচিকেতার সময় থেকেই ব্যাপারটা খানিক দুয়ে দুয়ে চার হয়ে আছে! সরাসরি টাকাকড়ি না-নিয়ে, নচি হালকা ঘুরপথে ঘটিয়েছিলেন ব্যাপারটা! যাতে করে পরবর্তীকালে যারা আমরা ‘আম-আদমি’, যমের দেখা প্রায়শ পেয়েও, কোনো অফার-টফার পাই না কোনোকালেই, ‘জ্ঞান’-কে ‘ধন’ করে তোলার প্রসেস-পটু হয়ে উঠতে পারি গোড়া থেকেই!
গল্পের কত যে পরত, সত্য সন্ধানে মত্ত মানুষের তা কী আর এক জীবনে বুঝে ওঠা হয় কখনও! নচিকেতার রসিকতায় পাছে কোনো ঘ্যাম-সিরিয়াস পাঠক দেশ-কাল-পাত্রের নিত্য অথবা সত্য বিচারে ব্রতী হয়ে ওঠেন, তাই আগেভাগে গরুকে গাছে তুলে রাখা জরুরি। বলে রাখা জরুরি, এ-লেখায় সামান্যও দায় এবং দায়িত্ব নেই সত্য রক্ষার। সে আপনি পাঠক, আপনিই ভালো জানবেন গল্প আসলে কী, গুজব কারে কয়, প্রকৃষ্ট প্রবন্ধ (আজকের ভাষায় ‘পেপার’) হয়ে ওঠার প্রাথমিক শর্তাবলী, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি জানি লিখলে কথা রবে, কোথাও-না-কোথাও, কালির কলঙ্কে অন্তত, তাই লিখি।
আমি লিখি, আপনি লেখেন, তুমি লেখো, সে লেখে, তিনি লেখেন। সর্বনামের লিঙ্গভেদ নেই, তবে বচনভেদ আছে। তাই আমরা লিখি, আপনারা লেখেন, তোমরা লেখো, তারা লেখে, তাঁরা লেখেন — সবাই লেখে। একইভাবে আমি থেকে সবাই, পড়িও। হালফিলের বাস্তবতা এটাই যে আমরা সবাই লিখি-পড়ি। এই বাস্তবতার বাইরে যেখানে তবুও আছে, রয়ে গেছে খানিক খানিক বিপরীত বাস্তব, লিখিয়ে-পড়িয়ে কিছু করে দেখানোর উদ্যমভুক্ত হতে তারও হয়তো দেরি তেমন নেই আর। থাকবেই বা কেন! আজও যে আছে, সেটাই তো কম লজ্জার কিছু নয়! সবার আগে সকলের জন্য চাই— ‘শিক্ষা’, অর্থাৎ, অক্ষরের অধিকার! কেননা স্বাক্ষরতা ক্রমশ আনে জ্ঞান — জ্ঞান আনে সক্ষমতা — সক্ষমতা আনে উন্নয়ন — আর উন্নয়ন আনে সভ্যতা! এবং যেহেতু যত মত, ততই পথ, আর সব পথ এসে শেষে সেই আমড়াতলার মোড়েই মেলে, বিকল্পের কথা বাড়িয়ে লাভ আছে কি কোনো?
গল্প গরু গাছে পাছে আরও গুলিয়ে ওঠে সবকিছু, মোদ্দাকথাটা এবার পেরে ফেলা যাক তবে। সাড়ে সাতেরোশো থেকে পৌনে তিন হাজার শব্দসীমায় আদতে এ-লেখা তার পাঠককে পা টিপে পড়িয়ে এবং বুঝিয়ে ফেলতে চাইছে রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায় নামের এক বাংলা গদ্যকারের সাহিত্যে-সাধন তত্ত্ব! কেন এ-হেন চাওয়া, আর ও তত্ত্ব (তা-ও অন্যের ব্যাখ্যায়) পড়ে প্লাস বুঝে কার কী হবে, সে অবশ্য বাড়তি প্রশ্ন। এমনটাই হয় বলে হচ্ছে এবং হবেও। একেই বলে সাহিত্য-সমালোচনা। অথবা আরও একধাপ এগিয়ে — সমালোচনা-সাহিত্য!
#
ব্যাপার হল গিয়ে রাঘবের সাহিত্যে কী আছে আমি তার কতটুকুই বা জানি! অথবা নিজেকে যদি এমনভাবে বোঝাই যে, আমিই একমাত্র জানি যে রাঘবের সাহিত্যে কী আছে, তারপরও রাঘবের সাহিত্যে যা আছে, তা কিন্তু রাঘবের সাহিত্যেই থেকে যাবে। এ-কথা যে শুধু রাঘবের সাহিত্যের ক্ষেত্রে বলা যায়, তেমন তো নয়। সাহিত্য হোক-না-হোক, যে-কোনো লেখারই তো এটুকুই সম্পর্ক সত্যের সঙ্গে। অক্ষরের মৃতশরীরে অমর হয়ে আছে যে কথাবৃত্তান্ত, পাঠক গিয়ে তাকে কাঠি না-করলে, তার আর সাধ্য কোথায় যে নিজেই জেগে ওঠে! এখন কেউ যদি ভেবে বসেন, এ-লেখার কাজ তাই পাঠককে পটিয়ে হাতে একটা কাঠি তুলে দেওয়া কোনো মতে, রাঘবের সাহিত্যশরীরে তা প্রয়োগ করার জন্য, ভুল করবেন। ও জিনিস পড়া বা না-পড়া আপনার ব্যাপার। আর ও-নিয়ে বুলি কপচানোর কাজ আমার না।
তবে?
মাতৃগর্ভ উৎস ধরে নিলে গন্তব্য মৃত্যুর নিরুদ্দেশলোক, অন্তর্বর্তী যা কিছু তার মধ্যেই থেকে যায় রচনাবৃত্তি, জৈব জীবনকে একটা-না-একটা অর্থ, তাৎপর্য, ব্যঞ্জনামণ্ডিত করে তোলার আকুতি ও প্রয়াস। নগ্ন স্বাধীনতা তার প্রায় জন্ম জড়ুল। দণ্ডিত হয়েও তাই প্রবল উৎসাহে জড়িয়ে পড়ে অন্তহীন সওয়ালে। যন্ত্রণাভিষিক্ত, বৈরি পরিবেশের সঙ্গে নিয়ত সংঘর্ষে লিপ্ত। অত্যাশ্চর্য সব ঘটনা তাকে ঘিরেই, শিকলের শব্দ যেন তার-ই অস্তিত্বের সংবর্ধনা-বাদ্য। কিছুতেই যে মৃত্যুকে দাসখত লিখে দেবে না, এমন মানুষ দাস হয় কী করে!
— “লিখনদাসের কথা”, ‘দলদাস’
সওয়াল-জবাব-সওয়ালেরা অন্তহীন আবর্তে জড়িয়ে যেতে যেতে, অনিঃশেষ পথের যাত্রী হয়ে উঠলে, জানি না কেন, ক্রমশ বেড়ে ওঠে হামসফরের খোঁজ! বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে একলা চলতে চলতেও হয়তো তাই লিখে রাখতে হয় একলা চলার বয়ান! আয়না অথবা ছায়ার মতো সেই লিখনই তখন হয়ে ওঠে একলা পথের সহযাত্রী, ভাবনা-দোসর! আর ঠিক সেখানেই কি নিজের অজান্তে সংঘটিত হয় কোনো ‘আত্ম’-ঘাতের আয়োজন? নিজের প্রশ্ন, ভাবনাজাল, চিন্তারেখাই হয়ে ওঠে পিছুটান এগিয়ে চলার পথে?
কী হবে এমন হয় যদি, হয়েই চলে নিরন্তর, তাসের ঘরের মতো ভেঙে পরে একের-পর-এক চিন্তা-কাঠামো হঠাৎ! ভাবনার ভিত যায় কেঁপে! যে লিখন ছায়াসঙ্গীর মতো এতটা পথ একসঙ্গে এল, সে-ই যদি হয়ে ওঠে আমার বর্তমান চিন্তার, অবস্থানের, এমনকি আগামী চলনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী, একাকী ভুলের একমাত্র সাক্ষী! কীভাবে এড়াব তাকে?
এই যে জড়িয়ে যাওয়া অথবা এড়িয়ে চলার বাস্তবতা, যা কম-বেশি প্রায় সকল সচেতন লেখকেরই সংকট, রাঘবেরও হয়তো বা লিখনের ‘জন্ম জড়ুল’! জীবনের প্রতিটা অলগলির গল্প যখনই স্মৃতিকথনের নিশ্চিন্ত আশ্রয় ছেড়ে, নিতে চায় আত্ম-অনুসন্ধানের এলোমেলো সংরূপ, ‘আত্ম’-কে অনবরত আঘাত করার মাধ্যমেই তখন যেন জন্ম নেয় শব্দ, একের পর এক। আহত, আঘাতপ্রাপ্ত সেই আত্মন — যে তখন নিজেকেও জানে না আর — আদৌ কি প্রস্তাব করে উঠতে পারে কোনো জ্ঞানের অস্তিত্ব বিন্দু? সেই মুক্ত ‘আমি’ তো তখন শুধু পাত্রই নয়, পেরিয়েছে দেশ-কালের সীমানাও!
অথচ যাকে বলছি লিখন, স্ব-ভাবে কেবলই তো বাঁধা পড়তে চাওয়া তার! শব্দ জমে জমে হয়ে উঠতে চায় পাথুরে প্রমাণ — জ্ঞানপ্রস্তর! জ্ঞানের প্রাচীর! এই যে যুগ্ম-বৈপরীত্য, লিখন আর আত্মনের সহাবস্থানে এই যে দুই বিপরীত প্রবণতা, তারই কোনো সমঝোতায়, অথবা অসমীকরণে কি জন্ম নেয় সাহিত্য? জ্ঞানের সঙ্গে কি নিত্য বৈরিতার সম্পর্ক তার? শৃঙ্খলের সম্বন্ধ? যাকে ছিন্ন করার বাসনায়, অস্বীকার করতে করতে, অজানার দিকে এগিয়ে যেতে চাওয়া শুধু?
সে চেয়েছিল চিন্তা করার ক্ষমতাকে আলোর শিখার মতো আগলে রাখতে। ভাবত যে ওই ক্ষমতাই সে। …এই গল্প তাই একদিকে যেমন শেষহীন, তেমনই লিখিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এর হাজার একটা বয়ান। কান পাতলেই শোনা সম্ভব ভাষার ওই কথন, তার অনুভব — ত্রাস ও মুক্তির তৃষ্ণা। — “বুথ নম্বর : ১৯৪৭”, ‘দলদাস’
#
মগজে কলোনি। গোটা চিন্তাকাঠামোয় যদি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রবাহিত হয়ে চলে ঔপনিবেশিক ঘুণ, হাজার একটা বয়ানও কি তখন পরিগণিত হবে-না, আদতে একই উচ্চারণের বিভিন্ন প্রতিধ্বনিরূপে শুধু! যদি তা-ও হয়, তাতেও কি উদাসীন-ঔদ্ধত্যে আদৌ উপেক্ষা করে ওঠা সম্ভব একের হাজার হয়ে ওঠার কঠোর বাস্তবতা? ক্রমপরিবর্তনশীল চিন্তা-প্রবণতা, কখনও সাময়িক, কখনও-বা সামগ্রিকভাবেই যদি বিভ্রান্তির অভিযোগ আরোপে খারিজ করতে চায় অতীত বাস্তবতা, বাতিল করতে চায় বহুচর্চিত ইতিহাসের বয়ান — অন্তহীনের অভিজ্ঞান, অনিঃশেষের আশ্বাসও তবে তো ঘাঁটি গড়তে শুরু করে সেখানে। কেন্দ্রের বিপরীতে যেতে চেয়ে প্রবল প্রত্যয়ে যখন প্রান্তের পথে পা বাড়ালাম, ভাবিওনি পেরোতে হবে ঠিক কতটা পথ! যখনই ভেবেছি প্রান্তে এসে পৌঁছেছি ঠিক, দেখি কেন্দ্রও সরে এসেছে আমারই পিছু পিছু চুপিসারে! এভাবেই যখন গেছে কেন্দ্র-প্রান্তের জানাটাই আদতে গুলিয়ে, পেয়েছি পথ চলার অনায়াস আনন্দ!
জানার সঙ্গে, জ্ঞানের সঙ্গে আনন্দের যে বোঝাপড়া, ইতিহাসের সঙ্গে সাহিত্যেরও খানিক তাই। জানায় আনন্দ আছে, কিন্তু কোনো বিশেষ জানায় থিতু হয়ে থাকলে, আনন্দে ক্রমশ টান পড়তে শুরু করে। ইতিহাস কোনো এক ঘটনাকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টি থেকে জানতে, বুঝতে বা ভাবতে চায় ঠিকই, কিন্তু ক্রমশ ওই জানা-বোঝাতেই থিতু হয়ে যাওয়া ব্যতিরেকে, তার আর উপায় থাকে না কোনো। ঔপনিবেশিক নির্মাণের নিকৃষ্ট সব ষড়যন্ত্র থেকে তার নিস্তার প্রায় নেই বললেই চলে। এ-কথা সেই কবেই বুঝেছিলেন বঙ্কিম। বুঝেছেন আধুনিক কালের আরও গুটিকয় ব্যক্তিত্ব। বুঝেছেন রাঘবও। সাহিত্যের পথে তাই নিরন্তর আনন্দের অনুসন্ধান তাঁর, শেকল পরা ইতিহাসের পিছুটান সম্বল করেই।
চিত্রগ্রাহক- অভ্যুদয় মণ্ডল
ছবি সৌজন্য- তৃতীয় পরিসর
Link…
গুরুচন্ডা৯ – ১৪ নভেম্বর ২০২০
রাঘবসাহিত্য: খোয়াব আর বাস্তবের গল্পভুবন : পারভিন হোসেন
“… মনোভাবের অধিকার মনে এবং কালে। মনোভাবের চেষ্টা বহু কাল ধরিয়া বহুমনকে আয়ত্ত করা। এই একান্ত আকাঙ্ক্ষায় কত প্রাচীন কাল ধরিয়া কত ইঙ্গিত, কত ভাষা, কত লিপি, কত পাথরে খোদাই, ধাতুতে ঢালাই, চামড়ায় বাঁধাই, কত গাছের ছালে, পাতায়, কাগজে, কত তুলিতে, খোন্তায়, কলমে, কত আঁকজোক, কত প্রয়াস— বাঁ দিক হইতে ডাহিনে, ডাহিন দিক হইতে বাঁয়ে, উপর হইতে নিচে, এক সার হইতে অন্য সারে। কী? না, আমি যাহা চিন্তা করিয়াছি, তাহা মরিবে না, তাহা মন হইতে মনে, কাল হইতে কালে চিন্তিত হইয়া, অনুভূত হইয়া প্রবাহিত হইয়া চলিবে।” [রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]
জৈব জীবন, দেহজ যাপনের পরও মানুষের এই থেকে যেতে চাওয়ার আকুতিই উন্মুখ করে তোলে সৃষ্টি-উৎস। নিজেকে প্রকাশ করার, ব্যক্ত করার যে জন্মজড়ুল নিয়ে পৃথিবীতে আসে মানুষ, সাহিত্য সেই আকুতির বিস্তৃত, মুক্ত প্রাঙ্গণ। জীবনের আচার-নিয়ম, আদব-কায়দায় সীমাবদ্ধ নয় বলেই সাহিত্য প্রতিভাত করে তুলতে চায় আমাদের পারা, না-পারা, পারতে চাওয়াকে। তুলে ধরতে পারে আমাদের হয়ে-ওঠার নীরব ইতিবৃত্ত।
“…আমরা সবাই আক্রান্ত সৃষ্টিব্যাধিতে। মাটির গোপনীয়তায় রসসিঞ্চনে শস্যসৃষ্টি করি আমরা, আমাদের বাঁশিনল গলায়, বাতাসচর্যায়, সুরজন্ম সম্ভব করি, তাকেই আবার আঁচড়ে অক্ষরে ধরি, বর্ণমালা আবিষ্কার করি, তারা পরস্পর মিলেমিশে, সঙ্গত করে শব্দ সম্ভব হয়— যা আমাদের চর্যাপদ, যাতে সৃষ্টি অব্যাহত, প্রাচীন সেই কৌমেরই একজন আমি,…।” [‘বামন অবতার’, রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়]
প্রকাশের এই তাড়নাতেই কথা ফুটেছে মানুষের মুখে, তৈরি হয়েছে অক্ষর। শব্দ, বাক্য, যতির ওঠানামায় শরীর পেয়েছে বলতে চাওয়া। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুদ্রণের বাড়বাড়ন্ত পেরিয়ে ডিজিটাল দুনিয়ার রমরমায় সাহিত্যের মাধ্যম ক্রমপরিবর্তনশীল। প্রকাশের প্লাবনে, জোগানের জোয়ারে সাহিত্যের কাঙ্ক্ষিত চর্যায়, নৈঃশব্দ্য যে কতটুকু বর্তমান, সে নিয়ে প্রশ্ন জাগে। জৈব প্রবৃত্তি, শরীর, শারীরিক জীবনের ঊর্ধ্বে নিজের যে অস্তিত্ব, অনুভবকে সাহিত্যে রেখে যেতে চাওয়া, প্রকাশের সহজলভ্যতা তার বিপরীত কোনো ‘আমিত্ব’- কে প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে ফেলছে কিনা, সে আশঙ্কাও এখন প্রাসঙ্গিক। ‘বাঁশবনে ডোম কানা’-র মতো সাহিত্যের খুল্লা বাজারে পাঠকরাও দিকভ্রান্ত যেন বা। অথচ বিপন্ন এই সময়েও শুধুমাত্র প্রকাশের আত্মিক তাড়নাতেও কোথাও অক্লান্ত থেকেছে কলম। অব্যাহত থেকেছে নৈঃশব্দ্যের প্রবহমান অনুশীলন। অর্থ, যশ, প্রতিপত্তির বাজার-ভুবন, ভোগজীবন, তথাকথিত ‘আধুনিকতা’ ‘স্বাধীনতা’-র সাইবার নিয়ন্ত্রণেও সাহিত্য তার শিকড় ছড়িয়েছে মাটির আরও গভীরে। গোপন চুপকথার মতো নিঃশব্দে বেড়েছে, তৈরি করেছে সময়ের ভিন্ন আখ্যান, অন্যকথন। সংখ্যার ভোটাভুটি, বাজারের শোরগোল, জনপ্রিয়তার বিজ্ঞাপনের বিপরীতে নিজস্ব ঘরানা ও ভিন্ন শৈলীর নির্মাণ, সেই লেখাকে অভিষিক্ত করেছে স্বতন্ত্র পরিসরে। একইসঙ্গে প্রচলিত প্রবণতা অতিক্রমণের চেষ্টা ও ভিন্ন নৈতিকতার প্রবহমান সৃজন সেই সাহিত্যকে করে তুলেছে রাজনৈতিকও, এবং তাই লাইমলাইটের বাইরে থাকা বিচ্ছিন্ন, একক এই প্রয়াস আমাদের সামনে ভিন্ন জবানকে শুধু তুলে ধরে তাই নয়, সাহিত্যের সম্ভবনা ও সম্যক ইতিহাসকেও যেন আভাসিত করে তোলে। রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্য এই ভিন্ন এবং বিরল ধারার ঐকান্তিক শরিক।
(২)
বাস্তবের অনুবর্তন ও কল্পনার বুনন বাংলা সাহিত্যে ফিরে ফিরে এসেছে বারবার। ক্লাসিসিজম, রোমান্টিসিজম, রকমারি রিয়ালিজম প্রভৃতি তত্ত্বের মোড়ক অথবা ঢেউ তার সচেতন প্রভাব ও অন্ধ অনুকরণসহ বাংলা সাহিত্যকে আন্দোলিত করেছে বারবার। বাস্তবের ‘হুবহু’ চিত্রায়ণ-চেষ্টা, তার শোক-দুঃখ, রোজনামচার নিখুঁত বর্ণনান্তে কখনও কালো রাত তো কখনও লাল সূর্যের ভোর যখনই উপচে দিয়েছে একঘেয়েমির ক্লান্তি, অবধারিতভাবে তখন আবার ফিরে এসেছে কল্পনার উদাত্ত, স্বাধীন, বিলাসী বায়বিত বিস্তার। বাস্তব আর কল্পনা, কল্পনা ও বাস্তবের চক্রাকার ঘূর্ণনে দীর্ঘদিন আলোড়িত হয়েছে সাহিত্যভুবন। বৃত্ত বহির্ভূত, ছকভাঙার প্রচেষ্টা যে একদমই ছিল না, তা জোর গলায় বলা না-গেলেও, একথা ঠিক যে সেই প্রয়াস ছিল নিতান্তই ক্ষীণ। অবিনির্মাণের প্রবহমান ভাবনা-চিন্তার অনুশীলন সেই পুনরাবৃত্তির ধারাবাহিক চিত্রকে অনেকাংশে পালটাতে সক্ষম হয়েছে, একথা অস্বীকার করা যায় না।
রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যে নিত্য এই ভাঙাগড়ার রূপ দেখতে পাওয়া যায়। ‘বিশ্বভুবন আদতে গল্পভুবন’- গল্পের এই দুনিয়ায় বাস্তবই গল্প, আবার গল্পই সেখানে রূপ নেয় বাস্তবের। অলীক কল্পনাবিলাস নয়, রাঘবের সাহিত্যে বাস্তব তার ঘাম, লালা, থুতু, কাঁচা নর্দমার উপচে ওঠা পাঁকের পচানি গন্ধে সেঁধিয়ে থাকা খোয়াবে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, হয়ে ওঠে, বা উঠতে চায়— গল্পশরীর। যেখানে খোয়াব জন্ম নেয় ছেঁড়া কাথাটিতেই, আর বেড়ে চলে লকলক করে। বাস্তব আর কল্পনা বলে বিচ্ছিন্ন করে রাখা এই দুই জিসমের এক জানই রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যের প্রাণভোমরা।
“…ক্ষমতা, যশ, প্রতিষ্ঠা যেই অন্যত্র সরে যাবে, ভন্ ভন্ শব্দও পালের বাতাস বুঝে সেইদিকে ছুটবে। প্রভু তখন গমিতমহিমা- এইসবও গল্প, কিন্তু লেখা বেশ কঠিন, লিখতে গেলে সাদা-কালোয় দ্বিভাজিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা তো আছেই।”
['দলদাস' 'লিখনদাসের কথা' - রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়]
(৩)
“কল্পনা করা যাক এ রকমই এক নয়, অনেক, যে-কারও সর্বজ্ঞ জিভ এরপর বকতে শুরু করবে, যার মধ্যে সহজ-জটিল, হতাশ ও রোমান্টিক, কপটতা, চালাকি ও নানারকম কারসাজি এবং সময়-বিভ্রাট থাকা সত্ত্বেও বিশ্বাস করার এক অত্যাশ্চর্য প্রতিভা সমস্ত অবিশ্বাস আর সন্দেহকে একপাশে ঠেলে দেবে। পাঠক-লেখক, শ্রোতা-কথকের এই সমাবেশে সব্বার মত প্রকাশের অধিকার সংরক্ষিত;”
রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কাটা জিভের বৃত্তান্ত’-র এই অনন্য উক্তির মধ্যেই তাঁর সমস্ত সাহিত্যসৃষ্টির মূল সুরটি নিহিত। ব্যক্তি, সমাজ, পক্ষের ঘেরাটোপ বিচ্ছিন্ন যেকোনো, যে-কারোর, উন্মুক্ত, বিস্তৃত পরিসরে রাঘবের সাহিত্যের সূচনা। বিচ্ছিন্নতা (সে প্রচলিত প্রথা, শিক্ষা, অভ্যাস যাই হোক) তাঁর সাহিত্যের প্রাথমিক শর্ত হিসাবে কাজ করেছে সবসময়। স্থান-কাল লুপ্ত সেই পরিসরে কথাই শুধু শাশ্বত। যে কারণে নির্দিষ্ট কোনো সময়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয় রাঘবের লেখনী। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ- এর বিভাজনরেখাও অস্পষ্ট সেখানে। সময়, স্থান, কাল, ব্যক্তি বিশিষ্ট ও বিচ্ছিন্ন কোনো পরিসরে রাঘবের সাহিত্যের স্থাপনা, ‘মেধাবী ভূত ও মাধবীলতা’য় তা ভূতগ্রাম, ‘কাটা জিভের বৃত্তান্ত’-এ কাটা জিভের অবাধ চরাচর নির্দিষ্ট নামের খোপে আবদ্ধ করে রাখে না তাকে, ‘রক্তজবা রহস্য’-র ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য। রাঘবের ছোট গল্পও এর বাইরে নয়।
ভালো ও খারাপ, সাদা এবং কালো এই পাক্ষিক গণ্ডিতে আটকে যাওয়া, নির্দিষ্ট নাম ধাম সময়ের নিক্তি ধরে তৈরি করা সাহিত্যও অমুক যুগ, শতক, শতাব্দীর সাহিত্য লক্ষণে সীমাবদ্ধ হয়ে যায় বড্ড, সংজ্ঞায়িত হয়ে যায় যেন, সেই কারণেই প্রতি লেখায় নাম, সংজ্ঞা, ছকের গণ্ডি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার, হয়ে চলার আপ্রাণ প্রচেষ্টা দেখা যায় তাঁর মধ্যে। তবে কি ছক বহির্ভূত, নামবিহীন, সময়স্তব্ধ শূন্য কোনো পরিসর তৈরি করতে চেয়েছিলেন রাঘব? নাকি, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ-বছর-মাস প্রভৃতি খোপে বদ্ধ কথার ভগ্নাংশ কুড়িয়ে, জুড়ে তাকে অসীম, মুক্ত ক্রমনির্মীয়মাণ পরিসরে স্থাপন করেছেন? কথা যেখানে অমর, সম্পৃক্ত, অবিনির্মিত, অনুক্ষণ!
এবং চূড়ান্ত বিচ্ছিন্নতা ও অসংলগ্নতা (আয়োজিত) সত্ত্বেও একাত্মতা ও মিলনের অদ্ভুত বৈপরীত্য দেখা যায় রাঘবের সাহিত্যে। ক্ষমতা, যশ, প্রতিপত্তি, প্রবণতা, স্থান, কাল, সময়, ব্যক্তি এমনকি ‘আমি’ নামক ধারণা থেকেও প্রতিনিয়ত বিচ্ছিন্ন হতে চাওয়ার যে স্বাক্ষর তাঁর সাহিত্য বহন করে চলে, একইসঙ্গে তার গভীরেই থেকে যায় এই সবকিছুর সঙ্গে তাঁর নিদারুণ সম্পৃক্তি, বোঝাপড়া, ও জানার ইতিবৃত্ত। এ প্রসঙ্গে ‘রক্তজবা রহস্য’-র শহীদ ক্ষুদিরামের জবানিতে একটি সংলাপ উদ্ধৃত করা যেতে পারে-
“যারা স্বপ্ন দেখেছিল, যারা ব্যক্তিস্বার্থের বাইরে বড়ো কিছু পরিকল্পনা করেছে এবং তার জন্য জীবনের বাজি ধরেছে, সেক্ষেত্রে একটা বিনিয়োগের ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ, বেঁচে থাকাকালীই স্বপ্নপূরণে আমি জীবন উৎসর্গ করেছি। সেই যে উৎসর্গিত জীবন সেটা তো ঘোরতর বাস্তব, সে জড়িয়ে থেকেছে, বেঁচেছে শরীরে নয় স্বপ্নশরীরে। আমি একে স্বপ্নজীবন বলি।… তোমাদের পণ্য সভ্যতার একটা গোড়ার সমস্যা হল এ সম্পূর্ণরূপে স্বপ্নবিরোধী এবং শরীরকেন্দ্রিক। সুখ, আরাম, প্রতিপত্তি, যশ- এর কোনওটাই স্বপ্নভূমির সন্তান নয়। এ হল স্থুল কর্মসূচি। কেবল টার্গেট পূরণের চক্করে ভুলে গেছে কখন অলক্ষ্যে নিজেরাই টার্গেট হয়ে গেছে।”
স্বপ্ন-খোয়াব-বাস্তব রাঘবের সাহিত্যে সমার্থক। সময়, বিভেদ মুছে যাওয়ায় খোয়াইশ তাঁর গল্পে লেপ্টে থাকে কুৎসিত, কদর্য, নৈঃশব্দ্যের হাত ধরাধরি করে। বাস্তব নামের গণ্ডি সম্পর্কে যা যা চিন্তা-ভাবনায় অভ্যস্ত আমরা, কল্পনা বলতে যে ফ্যান্টাসিতে বিচরণ করি রাঘব এই দুই ক্ষেত্রের মধ্যে ভেদ করেননি কখনও। রাঘবের গল্পে বাস্তব- যা তৈরি করে সেই সম্ভবনা, পরিসর, কল্পনার জন্মের, আবার কল্পনা- যা পেরোতে চায় বাস্তবের না পারা, অক্ষমতা, এই সবকিছু মিলেমিশে অসীম হয়ে উঠেছে। কোনো কাঁটাতারে বাঁধা যায় না যাকে, আটকানো যায় না নির্দিষ্ট গণ্ডিতে। সর্বোপরি রাঘব কথিত ‘বিশ্বাস করার এক অত্যাশ্চর্য প্রতিভা'(যা পাঠকের কাছ থেকে নিজগুণে আদায় করে নেন তিনি বা তাঁর কথাস্রোত) পূরণ করে দেয় তাঁর সাহিত্যের সমস্ত ফাঁকফোকর যা আদপে জীবনেরই বিচ্যুতি।
(৪)
রাঘবের কথনবিশ্বে শ্রোতা ও পাঠক সবারই মত প্রকাশের অধিকার সংরক্ষিত। ভূতকণ্ঠ বা কোনো সর্বজ্ঞ কাটা জিভের এই কথনে পাঠকের প্রবহমান অনুভূতি ও পরিবর্তমান মতামত মিলেমিশেই যেন তৈরি হয় রাঘবের গল্পভুবন। ‘কাটা জিভের বৃত্তান্ত’-এ যেকোনো কাটা জিভের কথনের মতো নিরপেক্ষ বহু ‘আমি’-র কথন পরিবেশিত হয় রাঘবের সাহিত্যে। বিচ্ছিন্ন যে শূন্য পরিসরে জন্ম নেয় রাঘবের গল্প, পাঠকের উপস্থিতিও সেখানে সংস্কার মুক্ত বায়বীয় শূন্যতা হিসাবেই প্রতিভাত। অসীম সেই নৈঃশব্দ্যে, সময় জ্ঞানহীন, কথালহরে বানভাসি পাঠকও সর্বজ্ঞ, সর্বত্রগামী সেই কাটা জিভ, কথক যেন। যে খোয়াবের জগতকে ভাষায়, অক্ষরে, চিহ্নে আভাসিত করে তুলতে চান রাঘব, পাঠক বা টুকরো টুকরো ‘আমি’ র অনুভব স্পষ্ট করে তোলে সেই স্বপ্নদুনিয়া। কথক, পাঠক ভেদ নেই বলেই রাঘবের কথনবিশ্ব অসংখ্য মতামত, কথা, অনুভব, অনুরাগে ঠাসা তৃতীয় পরিসর যেন। বিচ্ছিন্নতার যে অনুশীলন এক ‘আমি’ র ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে লেখককে অসীম অনুভবের দোরগোড়ায় হাজির করে সেইখানেই শ্রোতা, পাঠক, কথক মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। বিচ্ছিন্নতা ও ভিন্নতার ঊর্ধে এখানেই খোয়াব আর বাস্তবের এক হয়ে যাওয়া।
তবে শুধু চিন্তন ও অনুভবের বুননই নয়, প্রকাশের ভঙ্গি, ভাষা, শব্দ প্রতিটি ক্ষেত্রে রাঘব তাকে করে তুলেছেন নৈর্ব্যক্তিক। শুধু তাই নয় সময়জ্ঞানহীন সেই খোয়াব দুনিয়ায় নৈঃশব্দ্যই প্রধান কথক, এবং তাই তাঁর সাহিত্যে ভাষাও নির্দিষ্ট বন্ধন পেরিয়ে বাংলা, হিন্দি, প্রবাদ, প্রবচন, চুটকি, গানের কলি প্রভৃতিকে অনায়াসেই ঠাঁই দিতে পেরেছে নিজ শরীরে। ভাষার এক সম্মিলিত যৌথখামার আমরা দেখতে পাই রাঘবের সাহিত্যে।
(৫)
নিবিড় একাত্মতা ও নিপুণ বিচ্ছিন্নতার আয়োজনের বৈপরীত্য তৈরি করেছে রাঘবের লেখার পটভূমি। কৃপণের মতো কুড়িয়ে এনে উদার হাতে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল বলেই রাঘবের গল্পভুবন এমন স্বতন্ত্র, এমন জীবন্ত৷
“পেশাদার লেখক নই, কিন্তু সাহিত্যের হোলটাইমার অবশ্যই। কোনও কেন্দ্রীয় কমিটির সুপারিশ লাগে না এর জন্য। কর্পোরেটের, অকাদেমির অনুমোদন প্রয়োজন হয়নি। একমাত্র প্রয়োজন অন্যমনস্কতা, খোয়াবের জগৎটিকে কাদায়, নোংরায় আহ্বান করা। চোখের আলোয় কুৎসিতের, অপাংক্তেয়র মুখে ভালোবাসার দরিয়া দর্শন যেন ঘটে। ভাষার ঋণে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থেকেও যেন গ্রহণের তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে যায়। খিস্তি, হিন্দি গানের কলি, মার্জিত শব্দ হাত ধরাধরি করে চলুক।”
['দলদাস' 'লিখনদাসের কথা' রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়]
বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বপ্নের দুনিয়া নয়, রাঘবের গল্পে খোয়াব কাদায়, নোংরায় মাখামাখি বাস্তব। কুৎসিত, অপাংক্তেয়র মুখে ভালোবাসার দরিয়া দর্শন করার দৃষ্টি, সংলগ্নতা, অনুভব ছিল বলেই কাদা, নোংরা, আবর্জনার মাঝেও খোয়াবের জগতকে অনায়াসে নামিয়ে আনতে পেরেছিলেন তিনি। প্রতিদিনকার অভ্যস্ত, মুখস্তপ্রায় জীবনের চেনা সুখ, চেনা দুঃখ, পরিচিত গাঁটের ব্যথা, আরও চেনা বিরক্তি, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা হলে ঠোঁটে আলতো করে ঝুলিয়ে দেওয়া মেকি হাসি, শীতের জলধোয়া চামড়ার ভোঁতা স্পর্শের মতো অনুভূত হওয়া সত্ত্বেও জীবনের যে কামনা, হতে চাওয়া, হয়ে ওঠার চেষ্টা জীবনকে জীবন করে তোলে, আলাদা করে তোলে প্রতিটা দিনকে, সহনীয় করে তোলে, সহজ বলে মেলে ধরে, এবং তারই সঙ্গে গোপনে ছড়িয়ে চলে স্বপ্নবীজ, মুছে চলে সব বিভেদরেখা, সুপ্ত সেই জীবনের অজস্র সূক্ষ্ম তন্তুর মরমী বুনন রাঘবের গল্পকে এগিয়ে নিয়ে চলে। আর তাই রাঘবের সাহিত্য একই সঙ্গে যেমন অসমাপ্ত তেমনি চিরনির্মীয়মাণ।
চিত্রগ্রাহক- অভ্যুদয় মণ্ডল
ছবি সৌজন্য- তৃতীয় পরিসর
Link…